চরিত্রহীন

বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক একেন্দ্র চট্টপাধ্যায় কাগজ কলম লইয়া বসিয়াছে নুতন একখানা উপন্যাস লিখিবে বলিয়া। তবে এইবারকার উপন্যাসটি আগেরকার সতেরটি হইতে ভিন্ন হওয়া চাই। তাহার সর্বশেষ উপন্যাস “ধ্বংসাবশেষ” সাহিত্যিকমহলে বিশ্রীভাবে সমালোচিত হইয়াছে বলিয়া এইবারকার উপন্যাসে সে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে।
.

ঘন্টা দুয়েক মোচড়ামোচড়ি আর কলমের পশ্চাদদেশ কামরাইবার পর একেন্দ্র তাহার নামের প্রতি সুবিচারের চমতকার পথ পাইয়া গেল। ঠিক করিল এইবারে তাহার উপন্যাসের বিষয়বস্তু হইবে সাইকো-সামাজিক। কাহিনীর ভৌতিক অগ্রযাত্রা বজায় রাখিতে এতে কোন চরিত্র থাকিবে না। এবং নিজের নামের প্রতি সুবিচার করিতে উপন্যাসের বাক্য হইবে একটি।
.

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। পাকা হাতে এরকম একখানা এক বাক্যের সাইকো-সামাজিক-ভৌতিক উপন্যাস লিখিতে আর কতক্ষনই বা লাগিবে? তাই সে কালক্ষেপণ না করিয়া আরম্ভ করিল:
.

“অহর্ষির রহস্যময় হাসি …… ” লিখা শুরু করিয়াই থামিয়া গেল একেন্দ্র, “এ রে রে, অহর্ষি তো এক্কানা চরিত্র হইয়া পড়িল। উপন্যাসে তো চরিত্র থাকা চলিবে না।” মাথায় তাহার ঝড় খেলিয়া গেল, তথাপি সে অহর্ষি নামের মায়াও ছাড়িতে পারিল না। কি করা যায়? কি করা যায়? অহর্ষিকে রাখিতে হইবে কিন্তু উপন্যাসে চরিত্র থাকা চলিবে না এ যে এক অনভিপ্রেত উভয়সংকট। কামড়াইতে কামড়াইতে কলমের পশ্চাদদেশ গায়েব করিবার পর একেন্দ্রের মাথায় বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল, “বলচি, উপন্যাসের শুরুতে উদ্ভুত অহর্ষি চরিত্রখানা উপন্যাসের শেষে নাকচ করিবার উপায় দিলেই ত হয়! আর এর পরেও যদি অহর্ষির চরিত্র অক্ষুন্ন থাকে তবে তাহা ভৌতিক নয় কি?” চট করিয়া একেন্দ্র লিখিয়া ফেলিল তাহার আঠারতম উপন্যাস “চরিত্রহীন”।
.
.

ঊপন্যাস: চরিত্রহীন
প্রচ্ছদ: ছাইদানী
.

অহর্ষি রহস্যময় হাসি দিয়া কহিল, “চরিত্রের প্রয়োজনে আমি নগ্ন হইতে দ্বিধা করিব না।”

(সমাপ্ত)

Leave a comment